Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত মাটির উৎপাদনশীলতা রক্ষায় ট্রাইকো কম্পোস্ট

দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত মাটির উৎপাদনশীলতা রক্ষায় ট্রাইকো কম্পোস্ট

 কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মনি ১মোঃ গোলাম আরিফ২

কৃষির মূল মাধ্যম হলো মাটি। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উচ্চ তাপমাত্রা, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের কারণে লবণাক্ত পানি ফসলের জমিতে অনুপ্রবেশের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় ক্রমাগতভাবে লবণাক্ততা বাড়ছে। এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের বেশির ভাগই মে-সেপ্টেম্বর মাসে আমন মৌসুমে হয়ে থাকে। নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না ফলে মাটির লবণাক্ততা মে মাস পর্যন্ত বাড়তে থাকে। শুকনো মৌসুমে মিষ্টি পানির অভাবে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। আর এর থেকে পরিত্রাণের জন্য টেকসই কৃষি প্রযুক্তি হিসেবে জৈবসার তথা ট্রাইকো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ মাটির জৈব পদার্থ এবং অণুজীবের সাথে লবণাক্ততার সম্পর্ক ঋণাত্মক। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বা অণুজীবের সংখ্যা বেশি থাকলে মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ে এবং কৈশিক প্রক্রিয়ায় লবণ মাটির উপরিস্তরে আসতে পারে না। তখন বীজের অঙ্কুরোদগম সহজ হয়। সহজে চারা গজানোর ফলে যে সকল জমি শুকনো মৌসুমে পতিত থাকতো তার অনেকাংশে আরেকটি ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়। এজন্য মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ করে এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে টেকসই করতে ট্রাইকো কম্পোস্ট উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি অতীব প্রয়োজন।


ট্রাইকো কম্পোস্ট
ট্রাইকো কম্পোস্ট হলো একটি বিশেষ জৈবসার যার মূল উপাদান ট্রাইকোডার্মা নামক এক ধরনের উপকারী ছত্রাক। গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, সবজির উচ্ছিষ্টাংশ, কচুরিপানা, কাঠের গুঁড়া, ভুট্টা ভাঙা, চিটাগুড়, নিমপাতা, মেহগনি ফল এবং ট্রাইকোডার্মা ছত্রাকের অণুজীব (
3x107 C.F.U) নির্দিষ্ট অনুপাতে একত্র মিশিয়ে তা বিশেষ উপায়ে হাউজে জাগ দিয়ে ৪০-৪৫ দিন রেখে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে কম্পোস্ট তৈরি করা হয় তাই ট্রাইকো কম্পোস্ট।


ট্রাইকো কম্পোস্ট এর গুরুত্ব ও উপকারিতা
ট্রাইকো কম্পোস্ট অনুর্বর মাটিকে উর্বর করে এবং মাটির পুষ্টি উপাদানকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে এর উর্বরাশক্তিকে দীর্ঘস্থায়ী করার মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। ফলে মাটি পুষ্টিসমৃদ্ধ হয়, মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। এ ছাড়াও ট্রাইকো কম্পোস্ট ব্যবহারে ফসলের রয়েছে নানাবিধ উপকার। যেমন : ট্রাইকো কম্পোস্ট ব্যবহারে ফসলের অপুষ্টি দূর হয়, ফসলের গুণগতমান ভালো হয়। ট্রাইকো কম্পোস্ট উদ্ভিদের রোগবালাই এর উপদ্রব কমায় বা দমনে সহয়তা করে ফলে পরিপূর্ণ, পুষ্ট ও সতেজ ফসল পাওয়া যায়। ইহা মাটির গঠন ও বুনট উন্নত করে পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, পানির অপচয় রোধ ও সেচ খরচ কম হওয়ার ফলে কৃষকের আর্থিক সাশ্রয় হয় এবং মাটিতে অবাঞ্ছিত অজৈব পদার্থকে উদ্ভিদের খাদ্যে পরিণত করতে সহায়তা করে। ট্রাইকো কম্পোস্ট গাছের খাদ্যভান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় ১৭টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে উদ্ভিদ মাটি থেকে ১৪টি উপাদান সংগ্রহ করে থাকে, ট্রাইকো কম্পোস্টে উক্ত ১৪টি উপাদানের সবগুলোই কমবেশি বিদ্যমান, ফলে রাসায়নিক সারের ৩০% সাশ্রয় হয় এবং চাষির উৎপাদন খরচ ব্যাপক হারে কমে আসে। এটি গন্ধক, দস্তা প্রভৃতির ঘাটতি পূরণ করে গাছের বৃদ্ধিকারক দ্রব্য যেমন হরমোনও সরবরাহ করে থাকে। জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের আধিক্যজনিত কোনো বিষক্রিয়া সৃষ্টি হলে ট্রাইকো কম্পোস্ট ঐ বিষাক্ততা কমাতে সাহায্য করে। ট্রাইকো কম্পোস্ট মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব মাত্রা সঠিক রাখতে সহায়তা করে।


মাটি ও ফসলের রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করার ফলে পরিবেশের উন্নতি ঘটে এবং বিষমুক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনের সম্ভাবনাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এটি মাটিতে বসবাসকারী উদ্ভিদের ক্ষতিকর জীবাণু যেমন-ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও নেমাটোডকে মেরে ফেলে। ট্রাইকো কম্পোস্ট ব্যবহারে লবণাক্ত জমিতে  লবণাক্ততার প্রভাব কমে যায় এবং বীজের অঙ্কুরোদগম সহজ হয়। একই জমিতে বার বার ফসল উৎপাদনের কারণে জমির উপর চাপ পড়ছে, ফলে মাটির বিভিন্ন অজৈব উপাদানের পাশাপাশি ব্যাপক হারে জৈব পদার্থের ঘাটতি হচ্ছে। মাটিতে ন্যূনতম শতকরা ২-৫ ভাগ জৈব পদার্থ থাকতে হয়, জৈব পদার্থের উক্ত ঘাটতি পূরণে ট্রাইকো কম্পোস্ট সহায়তা করে থাকে। ফসলের উৎপাদন ও গুণগতমান বাড়িয়ে কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।


ট্রাইকো কম্পোস্ট তৈরির পদ্ধতি
ট্রাইকো কম্পোস্ট তৈরির উপকরণসমূহ সারণি দ্রষ্টব্য। ট্রাইকো কম্পোস্ট তৈরির জন্য যেখানে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে না এবং বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে এমন ছায়াযুক্ত উঁচু স্থান বাছাই করতে হবে। উপরে একটি ছাউনি দিতে হবে। সিমেন্টের স্যানিটারি রিং বা পাকা চৌবাচ্চায় ট্রাইকো কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। এ সার তৈরির জন্য ১০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৫ ফুট প্রশস্ত ও ৪.৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট হাউজ তৈরি করা যেতে পারে। সিমেন্টের স্যানিটারি রিংয়ে কম্পোস্ট তৈরির ক্ষেত্রে ২৪x২৪২৪ ইঞ্চি সাইজের নিচের দিকে ছিদ্রযুক্ত ৩টি রিং সংগ্রহ করে একদিকে ০.৫-১.০ ইঞ্চি নিচু করে ভালোভাবে বসাতে হবে যেন “লিসেট” সংগ্রহের সুবিধা হয়। কম্পোস্ট তৈরির সময় মূল উপাদানগুলো মেশানোর আগে কচুরিপানা ০.৫ ইঞ্চি সাইজে ছোট ছোট টুকরো করে এবং মেহগনি ফলগুলোকে থেঁতলে গুঁড়ো করে নিয়ে সকল উপাদানগুলোকে অবশ্যই আলাদা আলাদাভাবে পরিমাপ করতে হবে । প্রথমে হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে তার উপর কচুরিপানার স্তর বসাতে হবে। গোবর দিয়ে কচুরিপানাকে ভালোভাবে ঢেকে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য উপাদানসমূহ স্তরে স্তরে সাজাতে হবে। আলাদা একটি পাত্রে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির সাথে চিটাগুড়/ঝোলাগুড় ও ট্রাইকোডার্মা ছত্রাকের অণুবীজ মিশিয়ে ট্রাইকো কম্পোস্টের সমস্ত উপাদানসমূহের উপর ছিটিয়ে দিয়ে কোদালের সাহায্যে ভালোভাবে মিশ্রিত করে কাদা/পেস্টের মতো তৈরি করার পর সমান তিন ভাগে ৩টি রিং বা পাকা চৌবাচ্চায় রেখে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে এবং লিসেট সংগ্রহের জন্য রিংয়ের ছিদ্রের নিচে প্লাস্টিকের বোতল বা পাত্র রাখতে হবে। স্যানিটারি রিং বা পাকা চৌবাচ্চায় ট্রাইকো কম্পোস্টের উপাদান দেয়ার পর যে রিং বা চৌবাচ্চা থেকে যতটুকু লিসেট পড়বে ৫ দিন পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পরপর খেয়াল করে সেই পরিমাণ লিসেট একই রিং বা চৌবাচ্চায় পুনরায় ছিটিয়ে দিতে হবে। কোনক্রমেই এক রিংয়ের লিসেট অন্য রিংয়ে দেয়া যাবে না। ৫ দিন পর থেকে যতদিন পর্যন্ত লিসেট পড়বে তা ফসলে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। ২০-২৫ দিন পর কম্পোস্ট হাউজের উপাদানসমূহ ভালোভাবে উল্টিয়ে দিতে হবে। ৪৫-৫০ দিন পর হাউজ থেকে কম্পোস্ট বাহির করে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকাতে হবে। শুকানোর পর বিশেষ ধরনের চালুনির মাধ্যমে চেলে বা সরাসরি নিয়ে ট্রাইকো কম্পোস্ট সার হিসেবে বস্তায় সংগ্রহ করতে হবে এবং ফসলের জমিতে ব্যবহার উপযোগী হবে।


সতর্কতা
ট্রাইকো কম্পোস্টের সকল উপাদানসমূহ একত্রে মিশ্রিত করে কাদা বা পেস্ট তৈরি করার সময় পানির পরিমাণ  কোনক্রমেই বেশি দেয়া যাবে না। এজন্য ট্রাইকোডার্মা অণুবীজ এর কার্যকারিতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। লিসেট সংগ্রহের পর মোটা প্লাস্টিকের বোতল বা জারে রেখে অবশ্যই শক্ত করে মুখ আটকিয়ে রাখতে হবে।

 

পুষ্টিমান
ট্রাইকো কম্পোস্ট সারে গাছের অত্যাবশ্যকীয় ১৬টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে ১৪টিই বিদ্যামান। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতি ১০০ গ্রাম আদর্শ ট্রাইকো কম্পোস্টে জৈবপদার্থ ২০.০%, নাইট্রোজেন ১.২%, ফসফরাস ১.৪১%, পটাশ ০.৯৩%, ক্যালসিয়াম ১.৭১%, ম্যাগনেসিয়াম ০.৪০%, সালফার ০.১-০.০৫%, কপার ০.০১%, আয়রন (লৌহ) ০.১২%, ম্যাংগানিজ ০.০২৬%, জিংক ০.০২%, বোরন  ০.০১% এবং পিএইচ ৮.০০% রয়েছে। (উৎস : মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা)।


ট্রাইকো কম্পোস্ট ও লিসেট এর প্রয়োগ মাত্রা প্রতি শতকে আলুর জন্য ৭ কেজি; সবজির জন্য ৫ কেজি; ভুট্টার জন্য ৮ কেজি; ধানের জন্য ৭ কেজি ‘লিসেট’ প্রতি ০১ লিটার পানির জন্য ৩০ মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।


দক্ষিণাঞ্চলের কৃষির বর্তমান বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাম্প্রতিককালে মাটির ও পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি। তাই ট্রাইকো কম্পোস্ট ব্যবহার করে কম খরচে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রেখে এবং মাটির উৎপাদনশীলতা সংরক্ষণ করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি একটি আধুনিক টেকসই কৃষি প্রযুক্তি।

লেখক : ১আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক কার্যালয়, খুলনা। মোবাইল ০১৯১২১৫২৪২৪ ই-মেইল : monil1985@gmail.com 2 কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, আঞ্চলিক কার্যালয়, খুলনা। ই-মেইল : golamarifas@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon